হাওর বার্তা ডেস্কঃ চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার এই সফর নিয়ে দেশের রাজনীতিতে চলছে বাগযুদ্ধ। এর আঁচ লেগেছে সামাজিক মাধ্যমেও। তবে এবার ভিন্ন কারণে খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরগরম সামাজিক মাধ্যম। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায়, ডিসকাউন্ট দেয়া একটি শপিং মলে ছেলে ও পুত্রবধূকে নিয়ে কেনাকাটা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ওয়েস্ট লন্ডনের একটি শপিং মল থেকে তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে আশেপাশে নেতাকর্মীদের কোনো ভিড়-বাট্টা নেই।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে- বড় ছেলে তারেক রহমান ও পুত্রবধু জোবাইদা রহমানকে নিয়ে ওই শপিং মলে বেডশিট দেখছেন খালেদা জিয়া। এই ছবিটি এখন ফেসবুকে ভাইরাল। অনেকেই এই ছবি তাদের ওয়ালে পোস্ট করে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেছেন।
বেসকারি টেলিভিশন বাংলা ভিশনের হেড অব নিউজ মোস্তফা ফিরোজ এই ছবিটি তার ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, ‘জানতে চাই: সত্যি অভিভূত হওয়ার মতো দৃশ্য। ফেসবুকের ওয়ালে পেলাম এই ছবিটা। আমার বড় ভাই মোস্তফা ফারুক সপরিবারে অনেক দিন থেকে লন্ডনে বসবাস করেন। তার কাছে শুনেছি- তারা কেনাকাটার জন্য সামার বা বড়দিনের জন্য অপেক্ষা করেন। তখন সেল এ কেনাকাটা করেন। আমার বড় ভাই ও ভাবি সেখানে সাধারণ চাকুরে। কিন্তু আজ ফেসবুকে এই দৃশ্য দেখে কিছুটা চমকে গেলাম। আবার খুশিও হলাম।’
তিনি লিখেন, ‘আমার ভাই-ভাবির মতো সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার ছেলে ও বৌ সেল-এ কেনাকাটা করেন। একটা নৈকট্য খুঁজে পেয়ে খুশি হলাম। এটা হলো আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি।’
মোস্তফা ফিরোজ আরো লিখেন, ‘খুশির আরো কারণ আছে; আমরা জানি বিশ্বের বড় বড় নেতারা সাধারণ জীবন যাপন করেন। তারা সাধারণ মানুষের মতোই দোকানে যান, বাসে চড়েন বা রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করেন। বাংলাদেশের বেলায় কেবল মাঝেমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এমন সাধারণ অবস্থায় পাওয়া যায়। এবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে এমনভাবে দেখতে পেয়ে অনেক ভালো লাগলো। আপনি কী বলেন?’
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার এই ছবিটি তার ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, ‘একটি ছবি মানেই একটি বাংলাদেশ। একটি ছবি মানেই আগামী দিনের শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতিবিম্ব। ছবি যে স্বপ্ন দেখায়, সাহস যোগায়, উদ্দীপনা সৃষ্টি করে- এমন ছবিই তার প্রমাণ।’
তিনি আরো লিখেন, ‘একটি ছবি অনেক প্রশ্ন অনেক উত্তর। গোটা ছবির দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকালেই শাশ্বত, সাধারণ, নিরাভরণ, দুঃখিনী বাংলার চিত্রই খুঁজে পাওয়া যায়। হোক না এমনই- ক্ষতি কি? জিয়া পরিবার তো এমনই সাধারণ, এই ভাবেই তাদেরকে দেখতে চায় দেশের মানুষ।’
লন্ডন প্রবাসী নুরুন নবী তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘হঠাৎ কইরা খালেদা জিয়ারে দেইখা চমকাইয়া উঠলাম। ৪/৫ জন মানুষ নিয়া হাঠতেছে, ওয়েস্ট লন্ডন হওয়াতে কোনো সমস্যা হয় নাই, কিন্তু ইস্ট লন্ডন হইলে বাঙ্গালীদের চাপে এত স্বাভাবিকভাবে হাঁটা চলা করতে পারতেন না। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে গত সপ্তাহে আমি যেই দোকান থেকে একটা জ্যাকেট কিনলাম, খালেদা জিয়াও সেই একই দোকানে ঢুকলেন কেনাকাটার জন্য।’
লন্ডন বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়া কখনো নাতনিদের নিয়ে বাইরে ঘুরতে বের হচ্ছেন, আবার কখনো ছেলে ও পুত্রবধূকে নিয়ে শপিংয়ে বের হচ্ছেন। এর মধ্যেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হচ্ছেন। তবে চিকিৎসা শুরু হতে এখনো সময় লাগবে।
সূত্রটি জানায়, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রায় চার সপ্তাহ ধরে লন্ডনে রয়েছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। সেখানে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তিনি। চোখের অপারেশন করা লাগবে কি লাগবে না তার জন্য একটু সময় নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পায়ের চিকিৎসা শুরু হতেও সময় লাগবে।
লন্ডন বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়া লন্ডনে পরিবার নিয়ে একান্ত সময় কাটাচ্ছেন। দলের কোনো নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন না। কোনো আলোচনা অনুষ্ঠানের জন্যও নেতাকর্মীদের অনুমতি দিচ্ছেন না।
কারণ হিসেবে ওইসব নেতারা জানান, লন্ডন বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তারা নিজ নিজ বলয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করতে চান। এ নিয়ে খালেদা জিয়া ক্ষুব্ধ। যে কারণে নেত্রী কোনো অনুষ্ঠানের অনুমতি দিচ্ছেন না।
স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ১৫ জুলাই লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া। যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পর হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে প্রথমে হিলটন হোটেলে উঠেছিলেন তিনি। সেখানে কয়েক ঘণ্টা অবস্থানের পর লন্ডনের কিংস্টনে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ওঠেন খালেদা জিয়া।
ওই বাসায় তারেকের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান ছাড়াও প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি ও তার দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান রয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম কয়েছর আহমেদ বলেন, ‘ম্যাডাম পরিবারকে সময় দিচ্ছেন। এখনো উনার চিকিৎসা শুরু হয়নি। তিনি পরিবারের সদস্য ছাড়া বাইরের কারোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। কোনো নেতাকর্মী দেখা করতে পারেননি।’
গত ২০০৬ সালে ক্ষমতা হারানোর পর লন্ডনে খালেদা জিয়ার এটি তৃতীয় সফর। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে দেশে ফেরার পথে বড় ছেলে তারেক রহমানকে দেখতে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০১৫ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর একবার তিনি লন্ডন যান। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ওঠেন তিনি। দুই মাসের বেশি সময় লন্ডনে অবস্থান করে ২১ নভেম্বর দেশে ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
বিএনপি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান একাধিক মামলায় হুলিয়া নিয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে লন্ডনে রয়েছেন।